বৃহস্পতিবার, ০৮ Jun ২০২৩, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
জাকির হোসেন রাজু:: বিশ্বম্ভরপুরের ফতেপুর বাজার এলাকায় আবুয়া নদীতে সেতু না থাকায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার একাংশের লাখো মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ২০০৮ সালে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৫ দশমিক ৯২৬ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্তের সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখনকার সময়ে ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হলে এলাকাবাসী আশাবাদী হয়ে ওঠেন। সেতু নির্মানের কাজ শুরুর পর নদীর ২পাড়ে ২টি পিলার স্থাপন করার পর নদীর মধ্যে অর্ধ নির্মিত ১টি পিলার পাইলিংয়ের সমস্যা দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেতুর নিমার্ণ কাজ বন্ধ হয়ে গেলে এলাকাবাসী আশাহত হয়ে পড়েন। দীর্ঘ জঠিলতা কাটিয়ে ২০১৭ সালে সেতু নিমার্ণের বরাদ্দ বাড়িয়ে ২২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নিমার্ণ কাজের উদ্ধোধন করেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য বিরোধী দলীয় হুইপ এড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে তাহিরপুর উপজেলায় দুটি সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা যায়। একটি হলো বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদর হয়ে। এই সড়ক দিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুরের দূরত্ব ৩৮ কিলোমিটার। অন্যটি সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর হয়ে। এ সড়ক দিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুরের দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। ফতেপুর হয়ে তাহিরপুর যাতায়াত করতে ফতেপুর বাজারের পাশের আবুয়া নদীতে একটি খেয়া পার হতে হয়। তাহিরপুর উপজেলার সঙ্গে কম সময়ে জেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে আবুয়া নদীতে এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের জন্য নদীতে দুটি পিলার নির্মাণের পর সেগুলো নদীতে দেবে যায়। পরে সেতু নিমার্ণ কাজ বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এলকাবাসী জানান, তাহিরপুর উপজেলা থেকে ফতেপুর-নিয়ামতপুর সড়ক দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলায় যেতে সময় লাগে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫মিনিট। আর দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার এবং যোগাযোগের জন্যও সহজ। সেতুটি নির্মিত না হওয়ায় সারা বছর জেলা সদরের সাথে তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর উপজেলার লোকজন বাধ্য হয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদর দিয়ে জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ করছে।
অন্যদিকে জামালগঞ্জ উপজেলার মানুষ তাহিরপুর যেতে হলে আবুয়া নদীতে সেতু না থাকায় পড়তে হয় নানান সমস্যায়। জেলার অবহেলিত জামালগঞ্জ উপজেলার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে ব্যবসার-বানিজ্যের প্রান কেন্দ্র হিসাবে সাচনা বাজার পরিচিত পাওয়ার সুবাধে প্রতিদিন শত শত লোকজনের পদচারনায় মুখরিত হয় এ নদীটি। এছাড়াও এখানকার অধিকাংশ কৃষক, সবজি চাষীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বেচা কেনার জন্য নৌকা দিয়ে আসা-যাওয়া করতে গেলে যাতায়াত খরচের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে কষ্টার্জিত কৃষি জাতপণ্য বিক্রি করে লাভের পরিবর্তে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
ফতেপুর ইউপি সদস্য আব্দুল হেকিম বলেন, নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে আবুয়া নদীর সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। এখন এপ্রোচের কাজ বাকি, যার জন্য আমরা চলাচল করতে পারতেছি না। কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি দ্রæত সেতুটি চালু করা হোক।
ফতেপুর ইউনিয়নের বসিন্দা আলমগীর আলম বলেন, ‘এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী। সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে বেকারদের কর্মসংস্থান ও কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী কম সময়ে স্বাল্প মূল্যে সুনামগঞ্জ শহরে এনে বিক্রি করতে পারবেন। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ফতেপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিউল আলম বলেন, এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সেতুটি নির্মাণ করা হোক। কাজ শুরু হওয়ার কিছুদিন পর নানা জঠিলতার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেলে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। দীর্ঘ ১০বছর পর আবার সেতুর নিমার্ণ কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এপ্রোচের কাজ এখনও করা হয়নি। যার ফলে এখনও যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয়নি। কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি দ্রুত সেতুটি চালু করা হোক।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, আবুয়া নদীর সেতুর নিমার্ণ কাজ শেষ হয়েছে, পশ্চিম পাশের এপ্রোচের মাটি ভরাট নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছিল যারজন্য কিছুটা পিচিয়ে পড়েছে। আশা করছি আগামি কুরবানির ঈদের আগে সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে পারবো।