বৃহস্পতিবার, ০৮ Jun ২০২৩, ০৮:০২ অপরাহ্ন
জাকির হোসেন রাজু :: বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। বিশেষ করে চিকিৎসক সংকটে রোগীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী উপজেলা তাহিরপুরের লাউড়েরগড়, বিন্নাকুলি মোদেরগাঁও, রহমতপুর, সোনাপুর, বালিজুরিসহ প্রায় ২০টি গ্রামের রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্টাফ সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাগেছে, ১৯৮৪ সালে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষ্যে ১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ -৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলীয় হুইপ অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি ভবনটি উদ্বোধন করেন। একবছর আগে ৫০ শয্যার ভবন উদ্বোধন হলেও ৫০ শয্যার চিকিৎসা সেবার অনুমতি মিলেনি এখনও। এ নিয়ে উপজেলাবাসীর মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাগেছে, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) পদটি শূন্য রয়েছে। স্বাস্থ্য সহকারী পদে ২৫টি পদ থাকলেও ১১টি পদে লোক নেই দীর্ঘদিন যাবত। ডেন্টাল সার্জন, নার্সিং সুপারভাইজার পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সিনিয়ন স্টাফ নার্সের ২০ জনের স্থলে আছেন মাত্র ১২ জন। মিডওয়াইফের ৪টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য রয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) পদটিও শূন্য রয়েছে। টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ২টি পদই দীর্ঘদিন যাবত শূন্য রয়েছে।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি এন্ড ইমাজিং) পদটিও দীর্ঘদিন যাবত শূন্য রয়েছে। ফার্মাসিস্ট ২ জনের মধ্যে ১টি পদ শূন্য রয়েছে। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ৩টি পদই রয়েছে শূন্য। অফিস সহায়ক পদে ৪ জন লোক থাকার কথা থাকলেও লোক আছে ১ জন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ৫ জনের স্থলে আছেন ২জন। হিসাব রক্ষক পরিসংখ্যানবিদ ১টি, স্টোর কিপার ১টি, সহকারী নার্স ১টি, ড্রাইভার ১টি, জুনিয়র মেডিসিন ১টি, টিবি এন্ড লেপ্রোসি কন্ট্রোল অ্যাসিস্ট্যান্ট ১টি, মালি ১টি, ওয়ার্ডবয়, ২ জন সিকিউরিটি গার্ড, ২জন আয়াসহ মোট ৪৯ জনের পদ শূন্য রয়েছে।
ধনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষক এমদাদুল হক মিলন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যার ভবন আছে অথচ চিকিৎসা সেবার অনুমতি নেই। এটা আমাদের জন্য দুঃখের বিষয়। আমি মাননীয় এমপি মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে অনুরোধ জানাই আমাদের এই হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যার চিকিৎসা সেবা চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, জনবল সংকটের ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও বহিঃবিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে দেয়া ৮০ শতাংশ ঔষধ বাইরে থেকে কিনে নিতে হয়।
আলাল মিয়া, তজিবুর রহমানসহ একাধিক রোগী বলেন, নিম্নমানের খাবার সরবারহ, পর্যাপ্ত বিছানাপত্র না থাকাসহ চরম অব্যবস্থপনা রয়েছে এ হাসপাতালটিতে।
এ বিষয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সফর উদ্দিন বলেন, আমাদের উপজেলার মানুষ অত্যন্ত গরীব ও অসহায়। তাদের বেশির ভাগই সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে বিভিন্ন পদে জনবল সংকটের কারণে রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহেল মারুফ ফারুকী বলেন, জনবল নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ের নিয়োগের বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন।