মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৫:০০ পূর্বাহ্ন
জাকির হোসেন রাজু:: তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর উপরে নির্মিত ‘শাহ আরেফিন (র:) অদ্বৈত মৈত্রী সেতু’ দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে খুলবে সম্ভবনার নতুন দুয়ার। সেতুটি দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে সীমান্ত এলাকা সরাসরি যোগাযোগের আওতায় আসবে। এতে এলাকার যোগাযোগ ও অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসবে। গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প ও সম্ভাবনা। হাওর অঞ্চলে যাদুর ছোঁয়া লেগে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন সহজ হবে অন্য দিকে সৃষ্টি হবে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান।
এলাকাবাসী বলছেন, উপজেলার যাদুকাটা নদীর উপর নির্মাণাধীন ‘শাহ আরেফিন (র:) অদ্বৈত মৈত্রী সেতু’ চালু হলে তিনটি শুল্ক বন্দর বাগলী, বড়ছড়া ও চারাগাঁও স্থলবন্দর থেকে কয়লা, চুনাপাথর পরিবহন এবং পর্যটন স্পট শহীদ সিরাজ লেক, বারেকটিলা, শিমুল বাগান, টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রতিদিনই পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন যানবাহনে করে সহজে আসতে পারবেন। তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর উপজেলার সীমান্ত সড়ক দিয়ে জেলা সদরের সাথে ধর্মপাশা, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এতে করে হাওরাঞ্চলের মানুষের রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ আরও সহজ হবে। ফলে এখানকার পর্যটন ও কৃষিতেও বিপ্লব বয়ে আসবে।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সুত্রে জানাযায়, ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের এই সেতুটি ৮৫ কোটি ৮৬লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। নির্মাণকাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন। ২০১৮ সালে কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণকাজের মেয়াদ শেষ হলেও সেতুটির ৭২শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন মাসের দিকে এই সেতুর কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা বলছেন, এ সেতুর কারণে সুফল পাওয়া যাবে কৃষি ও পর্যটন খাতে। বিশেষ করে পর্যটন খাতে বিরাট সুফল বয়ে আনবে। হাওরাঞ্চলে শিল্পায়ন তথা জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন দুয়ার খুলে যাবে বলে মনে করছেন। তারা আরও বলছেন, এই সেতু দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে তা যে কেবল এই সেতুর আশপাশের জনগণের জীবনমানকে এগিয়ে নেবে তা নয় বরং এটা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে পুরো হাওরবাসীর জীবনকেই এগিয়ে নেবে।
তাহিরপুর উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায় রায়হান উদ্দিন রিপন বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের প্রতিফলন যাদুকাটা নদীতে নির্মাণাধীন এই সেতু। সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন হলে এই এলাকায় যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে। পর্যটকদের আগমন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এলাকায় পরিবর্তন সাধিত হবে। বাদাঘাট বাজারের ব্যবসায়ী নুর মিয়া বলেন, তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকায় বর্ষাকালে নৌকা এবং শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে বা মোটরসাইকেল ছাড়া যোগাযোগের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে পর্যটকদের পড়তে হয় নানান রকম সমস্যায়। এই সেতুটি চালু হলে পর্যনের অপার সম্ভাবনা খুলবে পাশাপাশি হাওর অঞ্চলের মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
কিশোরগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা আলমগীর হোসেন নামে এক পর্যটক বলেন, তাহিরপুরে অনেক সুন্দর পর্যটনস্পট আছে, কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। যার কারণে পর্যটকদের অতিরিক্ত খরচ করতে হয় সাথে পরতে হয় নানান রকম হয়রানিতে। যাদুকাটা নদীতে সেতুটি চালু হলে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা সহজেই হাওরাঞ্চলের পর্যটনস্পটগুলো দর্শন করতে হবে।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, জাদুকাটা ব্রিজ এই এলাকার সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত করবে। এই ব্রিজ হলে পর্যটকদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। এতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। এই এলাকার বালু পাথর শাক সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য সহজে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। মোটকথা এই সেতু এই এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, করোনা ও বন্যার কারণে কাজ অনেকটা পিচিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে সেতুর প্রায় ৭২শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামি বছর জুনে সেতুর উদ্ভোধন করতে পারবো।