অতঃপর তাকে ছাড়া পার করলাম আমার দুটি জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনের ব্যাপারটা সবার কাছেই বরাবর স্পেশাল ছিল । তবে আমার কাছে কখনো স্পেশাল ছিল না এমনকি অনেক সময় আমার জন্মদিনের তারিখটাই আমি ভুলে যেতাম। যেখানে নিজের জন্মদিনের কথা নিজেই ভুলে যেতাম সেখানে অন্য কারো কাছ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা আশা করাটাও একটা বোকামি।কিন্তু হঠাৎ করেই কেমন জানি সবকিছু বদলে গেল। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে আবার হারিয়ে যাওয়া মানুষের মতো খুঁজে পেলাম। সাদাকালো জীবনটা যেন নতুন করে রঙিন ছোঁয়া পেল। এইতো দুই বছর আগেও কত স্পেশাল ভাবেই না দিন টাকে উপভোগ করেছিলাম। কিন্তু এখন সবকিছুই স্মৃতির পাতায় জায়গা করে নিয়েছে।
ছবি: আমাদের সুনামগঞ্জ
কোনো বিশেষ উপলক্ষ কিংবা কোনো বেদনাদায়ক মুহূর্ত ছাড়াই হঠাৎ করেই কিছুদিন আগে তার সাথে আমার কথা হলো। যার সাথে কথা বলতে প্রতিটি মুহূর্ত চটপট করতাম অবুঝ মন শত রাগ অভিমান উপেক্ষা করে ছুটে যেত তার কাছে, সেই মানুষটার সাথেই কথা হলো অল্প কিছু সময় তাও ২ বছর ৩ মাস ২৬ দিন পর। এতদিন পর তার সাথে কথা বললাম সেই আনন্দে অশ্রুসজল চোখে আমি ঝাপসা দেখছি। আমার হাত কাঁপছে। আমি কিছুই লিখতে পারছি না। তারপর অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে যাও কিছু লিখে তাকে সেন্ড করতে যাবো ঠিক তখনি খেলাম নতুন আরেকটি ধাক্কা। রাগে, অভিমানে আমার ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ করে দিলাম। আমার আইডি টা স্থান করে নিলো তার ব্লক লিস্টে।
সময়টা ছিল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখ। বাহিরে প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস আর ভারী কুয়াশায় পরিবেশটাকে একদম শীতল করে তুলেছে। ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে হৃদয় জোরে। গুছানো চুলগুলোকে বাতাসের বেগে বার বার এলোমেলো করে দিচ্ছে। ফুটন্ত গোলাপের মতো চুলগুলো মুখের মধ্যে কেমন যেন ফোটে উঠছে। এক অদ্ভুত মায়াময় মুহূর্ত। যেকোনো প্রেমিক হৃদয়ে সাড়া দেওয়ার মতো এক দৃশ্য। এক হাতে কপি মগ এবং অন্য হাতে চুল গুছানোর ব্যস্ততা নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে রিমি। আকাশে একটি চাঁদকে কেন্দ্র করে লক্ষ্য লক্ষ্য তারা মিটমিট করে জ্বলছে। রিমি বার কয়েক চেষ্টা করেও তারাগুলো গুনতে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ৫০ এর উপরে গিয়ে হিসাবে গোলমাল পাকিয়ে ফেলছে সে।এদিকে কপি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে তার বিন্দুমাত্র নজর নেই। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আকাশের বিশালতাকে বুঝতে চাইছে। কিন্তু আকাশের বিশালতা, পাহাড়ের উচ্চতা এবং নদীর গভীরতা মাপা কি আদৌ সম্ভব?
হঠাৎ কর্কষ কন্ঠস্বরে তার গোড় কাটলো। রুক্ষ কন্ঠ শুনে সে আবেগ থেকে বাস্তবে ফিরলো। পিছনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছেন। কঠিন দৃষ্টিতে রিমির দিকে তিনি তাকিয়ে আছেন..!
– এই যে মহারাণী আপনার নাই কাল পরীক্ষা, তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে কি পায়চারী করছেন?
– কিছু না এমনি দাঁড়িয়ে আছি৷ কেন এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে মানা নাকি?
– না তা হবে কেন! আপনি হলেন স্বাধীন মানুষ ৷ যেখানে খুশি সেখানেই আপনি যেতে পারেন থাকতে পারেন। আপনার মতো কপাল কি আর সবার আছে?
– আহ্ মা! এভাবে কথা বলছো কেন? এইতো মাত্র আসলাম।
– চুপ কর! কাল পরীক্ষা আর এখন তুই বারান্দায় দাঁড়িয়ে পায়চারী করছিস! দেখ গিয়ে তর মতো মেয়েরা এতক্ষণে হয়তো বই একবার রিভিশন দিয়ে দিছে৷ আর তুই কি করছিস?
– সবসময় অন্যজনের সাথে তুলনা দিয়ো না তো মা৷ সবাই যদি আমার মতো হতো তাহলে তো সবাই আমি হয়ে যেতাম। তাছাড়া বাবা বলেছেন পরীক্ষার আগের রাত এত বেশি পড়তে নেই, পড়লেও খুব কম। শুধু চোখ বুলাতে বলেছেন৷
– অহ্ আচ্ছা। আমি তো ভুলেই গিয়েছি যে আপনার পিছনে তো হাতিয়ার আরেকজন আছেন। আপনারা হলেন জ্ঞানী মানুষ আপনাদের আবার পড়তে হয় নাকি! আপনারা এমনিতেই পাস করবেন।
– হুম তাতো অবশ্যই। দেখতে হবেনা মেয়েটা কার!
এই বলে রিমি মৃদু হাসি দিয়ে আবার চুপ করে রইলো। বুঝতে পারছে মা এখন রেগে আছেন। তাকে আর রাগান্বিত করা ঠিক হবে না।
– দেখ মা, তর সাথে কথা বলে না আমি আগে কখনো পেরেছি না ভবিষ্যতে কোনোদিন পারবো। তারচেয়ে ভালো হয় তুই তাড়াতাড়ি এসে পড়তে বস। মন দিয়ে পড়াশোনাটা কর।
– আচ্ছা মা তুমি যাও আমি আসছি।
ছবি: সংগৃহিত
আমি রিমি। বাবা মার দুই মাত্র সন্তান৷ দুই মাত্র কারণ আমার বোন আরেকজন আছে। বাবা মা, এক ভাই এবং দুই বোন নিয়ে আমাদের পরিবার। পরিবারের ছোট মেয়ে আমি। তাই সবার একটু বেশি আদরের তবে বাবার আদর একটু বেশিই পাই৷ আমি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি। পড়াশোনা বেশি সময় না করলে যতটুকু পড়ি তা যেন সুতোঁর মতো গেঁথে যায় আমার মাথায়। তাই অল্প পড়েও পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে যাই। ক্লাসের ফাস্ট গার্ল আমি৷ তবুও যদি কোনো পরীক্ষায় আমার বান্ধবী কেউ আমার থেকে ১/২ নাম্বার বেশি পেয়ে যায় তাহলে বাসায় এসে মায়ের বকুনি ফ্রি-তে আমাকে হজম করতে হয়। মায়ের দৃষ্টিতে আমি যত ভালো নম্বার পাই না কেন সেটা মূল বিষয় না, মূল বিষয় হচ্ছে আমার চেয়ে যাতে কেউ বেশি নম্বর না পায় সেটাই। মায়ের দৃষ্টিতে অন্য ৮/১০ টা মেয়ের থেকে আমাকে আলাদা হতে হবে। পড়াশোনা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আমাকে বেস্ট হতে হবে। এদিক থেকে বাবা আমাকে সবসময় সাপোর্ট করেন৷ কে কি করেছে? কে কত নম্বর পেয়েছে এগুলো না দেখে তিনি সবসময় দেখেছেন আমি কতটুকু পেরেছি কিংবা কতটুকু চেষ্টা করেছি। বাবা সবসময় আমার দলে। আমি যতই নিখুঁত কাজ করি না কেন মা একটা না একটা খুঁত ঠিকি খুঁজে বের করবেন৷ আর উপদেশ তো আছেই৷ এভাবেই পরিবারের সাথে হাসিখুশি আর খুনসুটিতে চলে যায় আমার দিন।
রুমে এসে বই হাতে নিয়ে টেবিলে বসলাম। হঠাৎ পাশ থেকে টুং শব্দ করে মোবাইলটা বেজে উঠলো। বুঝতে পারছি কেউ আমাকে মেসেঞ্জারে নক করছে। তাই বইকে বইয়ের জায়গায় রেখে এসে আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে বিছানায় চলে আসলাম। হ্যাঁ, কাল পরীক্ষা তবে আমার প্রস্তুতি নেওয়া শেষ৷ এখন বেশি পড়লে আর পরীক্ষার সময় কিছুই মনে থাকবে না৷ তাই ইচ্ছে করেই পরীক্ষার আগের রাতে আমি বইয়ের সাথে ব্রেকআপ করে দেই।
আমাকে ইনবক্সে একটি অচেনা ছেলে নক করছে।সে টেক্সট করছে ‘আজ তো প্রপোজ ডে তো আপনি কাউকে প্রপোজ করেছেন?’ টেক্সট দেখে আমি রিতীমত অবাক! আশ্চর্য, শুরুতেই অপরিচিত কেউ কাউকে এভাবে প্রশ্ন করতে পারে?
আজ যে ফেব্রুয়ারীর ৮ তারিখ তা জানতাম কিন্তু এই তারিখ যে প্রপোজ ডে সেটাতো জানতাম না। ইতিহাস বইয়ে কত দিবসের কথাই তো জানলাম এবং পালন ও করলাম কিন্তু এই প্রপোজ ডে টা আবার কবে থেকে আবিষ্কার হলো? জানতাম নাতো। মনে হয় নতুন আমদানি তাই আমার অজানা রয়ে গেছে।
যাইহোক, বেচারা এত কষ্ট করে জানতে চেয়েছে আমি কাউকে প্রপোজ করেছি কি না। এখন আমার উচিৎ তার প্রশ্নের উত্তরটা দেওয়া। যেই উত্তর দিতে যাবো ঠিক তখনি আইডি টার নামের দিকে তাকিয়ে আমি রীতিমতো অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। ওমা! এ আমি কি দেখছি। আরেহ এ তো সেই ঝগড়াটে ছেলেটা। এর আগে অনেক বার এর সাথে আমার নানান বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। একে অপরের কথা কারোই সহ্য হতো না। যতবার কথা হয়েছে ততবার একটা না একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু সেই ছেলে আজ এত বিনয়ের সাথে প্রশ্ন করছে! যাইহোক অবশেষে ছেলেটার উন্নতি হচ্ছে৷ এরপর তার প্রশ্নের উত্তর দিলাম ‘আজ যে প্রপোজ ডে সেটাই জানতাম না আর প্রপোজ করা তো দূরের কথা’। তারপর শুরু হলো একের পর এক কথা।
ছবি: আমাদের সুনামগঞ্জ
এভাবেই ঝগড়াঝাটির অবসান ঘটিয়ে একে অপরের সাথে কথা বিনিময়ের মাধ্যমে শুরু হলো রিমি ও রকি’র বন্ধুত্ব। তাদের মধ্যে খুব ভালো একটি বন্ধুত্ব শুরু হয়৷ একজন আরেকজনের সম্পর্কে জানতে চায়, বুঝতে চায়, জীবনের লক্ষ্য কি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে নিয়মিত কথা হতো। একজন অনলাইনে না আসলে অন্য জনের কেমন শূন্য শূন্য লাগত। তারপর মোবাইলে কল দিয়ে মেসেজ পাঠিয়ে একে অন্যজনকে আনা হতো অনলাইনে। এভাবেই কেটে গেলো কিছু দিন। তাদের মধ্যে কথা আরো তিব্র হতে শুরু করলো। দুজন দুজনের মায়ায় পড়ে গেল। এইতো কিছুদিন আগেও একজন আরেকজনকে শত্রু মনে করতো কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের মধ্যে কি সুন্দর একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠলো।
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। রকি সিদ্ধান্ত নিলো সে রিমিকে তার মনের কথা বলে দিবে। সে জানে না রিমি তাকে ভালোবাসে কি না, তবে সে এটা জানে যে সে রিমিকে প্রচন্ডরকমের ভালোবাসে৷ তাই সে আজকের দিনটা মিস করতে চায় না৷ সে আজকেই রিমিকে প্রপোজ করতে চায়। যেই ভাবনা সেই কাজ।
রিমি অনলাইনে আসলো ১১ টার দিকে। রকি রিমিকে টেক্সট করলো…
– কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালোই৷ তুমি?
– এইতো আছি ভালোই। আচ্ছা রিমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই। জানিনা তুমি বিষয়টি কিভাবে নিবে তবুও বলছি৷
– আচ্ছা বলো কোনো সমস্যা না।
– রিমি আমি খুব সহজ ভাবেই তোমাকে কথাটি বলছি। হয়তো খুব তাড়াতাড়িই বলছি। আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। রিমি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– রিমি মনে মনে এটাই সন্দেহ করেছিল। এখন সন্দেহটাই ঠিক হলো। তবে সে রকিকে কিছু বুঝতে না দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললো, কি বলছো তুমি? তুমি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো?
– হে আমি বুঝেই বলছি। অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েই বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– কিন্তু আমিতো এখন এসব কিছু ভাবছি না৷ আর তুমি এসব কখন ভাবলে?
– আমি বিগত তিনদিন ধরেই এক কথাটি ভাবছি। আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলছি নিজের মনের অজান্তেই। তবে তোমাকেও যে আমাকে ভালোবাসতেই হবে এমন কিন্তু না। তোমাকে আমার ভালো লাগে কিন্তু আমাকে তোমার ভালো নাও লাগতে পারে৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি এটাই আমার স্বার্থকতা৷ তবে তুমি আমাকে ভালোবাসালে কি না সেটা নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। তুমি অন্য কাউকেও ভালোবাসাতে পারো সেটা তোমার ইচ্ছা। তবে আমার মনের কথাটা তোমাকে জানালাম।
– আচ্ছা আমাকে কিছু সময় দাও। এই বিষয় নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো।
রকির সাথে কথা শেষ করে রিমি অফলাইনে চলে আসলো। সে ভাবছে৷ সে বুঝতে পারছে না এখন রকিকে কি উত্তর দিবে৷ কিন্তু সেতো এটাই চেয়েছিলো৷ হয়তো রকি জানত না৷
সময়টা ছিল ২০১৪ সাল। তখন রিমি পড়তো ক্লাস সেভেনে আর রকি পড়তো ইন্টারে। রিমি তার মায়ের মোবাইল দিয়ে একটি ফেসবুক একাউন্ট খুলে। ফেসবুক সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই।তার কিছুদিন পরে ফেসবুকে রকির সাথে রিমির পরিচয় হয়। তখন ফেসবুকে একমাত্র তার ফ্রেন্ড ছিল রকি৷ খুব অল্প কিছুদিন কথা হওয়ার পর রিমি আর ফেসবুক ব্যবহার করে নি৷ রকির সাথেও আর কোনো যোগাযোগ হয়নি৷ তবুও ছোট্ট মেয়ে রিমির মনের কোন এক কোণে রয়ে গেছে রকি নামের ছেলেটি। সেটা হয়তো রকি জানে না৷ আর তার হাজার হাজার ফ্রেন্ডের ভিড়ে হারিয়ে গেল রিমি নামের মেয়েটি৷ আর এটাই স্বাভাবিক। আর রিমির কোনো বন্ধু ছিল না রকি ছাড়া তাই হয়তো তাকে ভুলতে পারে নি সে। রকি সম্পর্কে কিছুই জানত না রিমি। শুধু তার ফেসবুক আইডির নামটা মনে আছে রিমির।
সেদিনের পর থেকে কেটে গেল প্রায় তিনটি বছর৷ ফেসবুক জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে মেয়েটি৷ তবে মাঝে মাঝে প্রায় তার রকির কথা মনে পড়ে। সে ভেবে রেখেছে যদি কোনোদিন ফেসবুক একাউন্ট খুলে তাহলে প্রথমেই কথা বলবে রকির সাথে৷ এখন রিমি ক্লাস টেনে পড়ে। তিনবছর পর ফেসবুক জগতে তার নতুন করে আগমন ঘটলো। তারপর রকির আইডি খুঁজে বের করে নক করলো। পরিচয় দিয়েছে কিন্তু রকির কিছুই মনে নেই৷ সে রিমি কে চিনতে পারে নি। আর না চেনাটাই স্বাভাবিক। এরপর থেকে তাদের মধ্যে কোনো সন্ধির কথা হয়নি। যতবার কথা হয়েছে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। তারপর আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব থেকে শুরু করে আজ রকি তাকে প্রপোজ করলো।
ছবি: আমাদের সুনামগঞ্জ
রিমি কিন্তু সেই ক্লাস সেভেন থেকে রকিকে পছন্দ করতো৷ ছোট ছিল তাই হয়তো বুঝতে পারে নি। তবে রকির প্রতি তার আবেগ অনুভূতিগুলো স্পষ্ট বলে দিচ্ছে সে রকিকে অনেক ভালোবাসে। হয়তো সে বুঝতে পারে নি, হয়তো প্রকাশ করতে পারে নি। কিন্তু আজ ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসি কথাটি শুনার পরও রিমি চুপ করে আছে। কিন্তু কেন? কিছু কারণ তো অবশ্যই আছে।
ছোটবেলা থেকেই নিয়মের বেড়াজালে সে বড় হয়েছে। বাবা মার কাছ থেকে সব ধরনের স্বাধীনতা সে পেয়েছে। কোনোদিন কোনো কিছুর অভাব তারা অপূর্ণ রাখেননি৷ তবে তারা মেয়েকে সবধরনের স্বাধীনতা দিলেও কেবল একটি স্বাধীনতা তাদের হাতে রেখে দিয়েছেন। তা হলো, মেয়ের জীবনসঙ্গী তারা নিজেরা ঠিক করে দিবেন। সেখানে মেয়ের কোনো ভূমিকা থাকবে না৷ একটি মেয়ে বড় হওয়ার পর যখন তার পরিবার থেকে এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয় তখন নিজের অজান্তেই নিজের মনকে আত্মাহত্যা করতে হয়। বাবা মার কথা রাখতে গিয়ে অনেক মেয়ে নিজেই ভুলে যায় তার ভেতরেও একটি মন আছে। সেও কাউকে ভালোবাসাতে চায়৷ সাদামাটা কারো দায়িত্ব নিতে চায়৷ মা হওয়ার আগে একটু অভিভাবক হতে চায়। কিন্তু পরিবারের এই কঠিন সিদ্ধান্তটি মনে হওয়ার পরে আর ইচ্ছে করে না ভেতরের আমিটাকে নতুন করে অন্য রুপে জাগিয়ে তুলার। ঠিক এই নিয়মের বেড়াজালেই আটকে পড়ছে রিমি নামের মেয়েটি। তার জীবনে প্রেম ভালোবাসা নিষিদ্ধ।
তারপর কেটে গেলো আরো দেড়মাস। রিমি অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো এবার সেও রকিকে বলে দিবে তার ভালোবাসার কথা। সে জানে না এই ভালোবাসার শেষ পরিণতি কি হবে, তবে এই মুহূর্তে সে রকিকে আর ইগনোর করতে পারছে না। যে ছেলেটা তাকে কখনো দেখেনি, রূপের কোনো সৌন্দর্য খুঁজেনি তার ভালোবাসা নিঃসন্দেহে গ্রহণ করা যায়। এই ভালোবাসাই পবিত্র। যাতে থাকবে না কোনো শারীরিক সম্পর্ক , থাকবে না দেহের প্রতি কোনো আকর্ষন, থাকবে শুধুই মনের টান। হে এটাই খাঁটি ভালোবাসা। অতঃপর সেও রকিকে জানিয়ে দিলো সে তাঁকে ভালোবাসে। তবে রকি এটা জানে না তিনবছর ধরে যে রিমি তাকে পছন্দ করে আসছে। এটা নাহয় রকির সাথে কোনোদিন দেখা হলে বলবে। এটা নাহয় রকির জন্য রিমির পক্ষ থেকে একটি সারপ্রাইজ রয়ে গেলো।
শুরু হলো রকি আর রিমির ভালোবাসা। রাত জেগে চ্যাট করা। একজন আরেকজনের জন্য অপেক্ষা করা। যে মেয়েটি রাত ১০ টা হলেই ঘুমের রাজ্যে ডুব দিত সেও ইদানীং রাত ৩টা পর্যন্ত জেগে থাকে শুধু মাত্র প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলার জন্য। মনে মনে হাজারো স্বপ্নের আল্পনা সাজিয়ে রাখে। একদিন তাদের এই পবিত্র চাওয়া গুলো সত্যি হবে। দুই হাত চার করে সব স্বপ্ন পূরণ করবে। এভাবেই কেটে যেতে লাগলো তাদের দিনগুলো।
এর মধ্যে রকি অনেকবার রিমির সাথে মিট করতে চাইছে। কিন্তু পারিবারিক সমস্যা আর মনে সংকোচ থাকার কারণে রিমির দেখা করার সুযোগ হয়ে ওঠে নি। প্রথমত, কোনোদিন তার ছেলে বন্ধু ছিল না৷ ছেলেদের সাথে কথা বলার অভ্যাসও তার নেই। আর হঠাৎ করেই রকির সাথে কিভাবে দেখা করবে। ঠিক করে নিজেকে গুছাতে পারছে না। তাই আরো কয়েকদিন সময় নিয়ে নিলো। কিছুদিন পর তারা মিট করবে৷ রকিও বাধ্য ছেলের মতো রিমির কথা মেনে নিলো। ভালোবাসার মাঝে তো এটাই হওয়া চাই। একজন আরেকজনের পরিস্থিতি বুঝবে, বিশ্বাস করবে তবেই তো ভালোবাসা পরিপূর্ণ হয়। দেখা না হয় দেরিতেই হলো তাতে কি ভালোবাসা তো আর কমে যাচ্ছে না।
ছবি: সংগৃহিত
তাদের এই সুখের দিনগুলোতে হঠাৎ নেমে আসলো অন্ধকারের কালো ছায়া। প্রায় ৮ দিন হতে চললো রকির সাথে রিমির কোনো যোগাযোগ হচ্ছে না। যোগাযোগের সমস্ত মাধ্যমে অফ। হঠাৎ করেই রকি কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলো। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমু থেকে শুরু করে মোবাইল নাম্বার সবকিছু বন্ধ। চিন্তায় রিমি অস্থির হয়ে আছে। হঠাৎ করে কি এমন হলো যে রকির কোনো খুঁজ নেই। সে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করছে না, ঘুমুতে পারছে না রকির চিন্তায়। মাঝে একদিন রকির ফোনে কল ডুকছিল কিন্তু রিমির আম্মু পাশে থাকার কারণে রকি ফোন রিসিভ করার পর আবার লাইনটি কেটে দেয় রিমি৷ তারপর আম্মুর পাশ থেকে সরে গিয়ে আবার কল দিলো কিন্তু ততক্ষণে মোবাইলটি আবার সুইচ অফ দেখাচ্ছে। রিমি ভেবেছিলো হয়তো সে অনলাইনে আসবে তারপর কথা বলবে। কিন্তু রিমির ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সে আর অনলাইনে আসে নি। এভাবেই কেটে গেলো আরো ১০ দিন।
পরেরদিন হঠাৎ করেই রাত দুটোর সময় রকি অনলাইনে একটিভ হলো। তারপর রিমিকে নক করলো। এতদিন উধাও হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রকি উত্তর দিলো গত কয়েকদিন সে অসুস্থ ছিল। অসুস্থতা এতটাই তীব্র ছিল যে রুম থেকে বের হয়ে মোবাইলে টাকা ঢুকানোর শক্তি পায়নি, যার কারণে রিমির সাথে সে যোগাযোগ করতে পারে নি। রকির অসুস্থতার কথা শুনে রিমি খুব কষ্ট পেলো। অন্তত একটি খবর তো দেওয়া যেতে পারতো। ১০ দিনের মধ্যে কি একদিন ও কষ্ট করে সে যোগাযোগ করতে পারতো না? সে কি জানে না তাকে ছাড়া আমি নিঃস্ব। আমার কতটা চিন্তা হতে পারে? তবুও ইচ্ছে করে সে আমাকে এভাবে কষ্ট দিলো!
তারপর রকি বললো, তুমি সেদিন কল দিলে আর আমি রিসিভ করার সাথে সাথে লাইনটা কেটে দিলে কেন? রিমির উত্তর না শুনেই সে বলতে লাগলো৷ তোমার মোবাইলের দুই টাকা খরচ হয়ে যাবে বলে তুমি ফোনটা কেটে দিলে রিমি? এক মিনিট ও কি কথা বলতে পারতে না? তাই আমি ইচ্ছে করেই ১০ দিন মোবাইল অফ করে রেখেছি৷ আজ মোবাইলে টাকা লোড দিয়ে তারপর তোমাকে নক দিলাম।
রকির কথা শুনে রিমি স্তব্ধ হয়ে আছে। রকি এসব কি বলছে? আম্মু পাশে থাকার কারণে সেদিন ফোনটা কেটে দিয়েছি তাই বলে এসব কি বলছে সে? টাকা শেষ হয়ে যাবার ভয়ে আমি লাইনটা কেটে দিয়েছি এটা রকি বলতে পারলো?
রিমির খুব অভিমান হয় রকির মুখ থেকে কথাটি শুনার পরে। তারপর কোনো কথা না বলেই সে অফলাইনে চলে যায়।
রিমি ভেবেছিলো রকি হয়তো তার অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য তাকে এখন কল দিবে। এত দিন ইচ্ছে করে কষ্ট দেওয়ার জন্য সরি বলবে। কিন্তু রকি সেগুলোর কিছুই করলো না৷ সে বরং উল্টো রিমির উপর রাগ করে আছে। এতদিন পর অসুস্থতা কাটিয়ে উঠলো। আজ এতদিন পর রিমির সাথে কথা বলবে কিন্তু সে হঠাৎ করেই কিছু না বলে অফলাইনে চলে গেলো। রিমির উপর তাও প্রচন্ড রাগ হতে লাগলো। শুরু হলো পরস্পরের প্রতি অভিমান।
রকি ছিল খুব রাগী আর প্রচন্ড একরোখা টাইপের ছেলে। আর রিমিও ছিল প্রচন্ড জিদ্দি মেয়ে। তাই কেউ কারো রাগ অভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করলো না। বরং একজন আরেকজনের জন্য অপেক্ষা করছে কবে অপরজন এসে সরি বলে আবার সব মিটমাট করে নিবে। কিন্তু নিজেদের জিদ বড় করে দেখায় কেউ আর কারো কাছে নত হলো না। এভাবেই শুরু হতে থাকলো তাদের মধ্যে দূরত্ব। একজন অনলাইনে থাকলে অন্যজন তখন অফলাইনে। কেউ কাউকে কল দেয় না মেসেজ দেয় না৷ যখন দুজন অনলাইনে থাকে তখন ইচ্ছে করেই কেউ না কেউ অফলাইনে চলে যায়। তাদের সম্পর্কের কথা কেউ জানে না। তাই তৃতীয় পক্ষ থেকে তাদেরকে মিলিয়ে দেওয়ার মতো সুযোগ ছিল না৷
রিমি বসে আছে রকির ফোনের অপেক্ষায়। একবার ও কি কল দেওয়া যায় না? আমি যে অভিমান করে আছি সেটা কি রকি বুঝতে পারে না? আচ্ছা! ছেলেদের কমনসেন্স এত কম কেন? ওর কি একটুও চিন্তা হয় না আমার জন্য? নাকি বুঝে না আমার কেমন লাগছে! আমি কিভাবে থাকবো? আচ্ছা, মানুষ বাঁচে কেন? একটুখানি স্পর্শ, একটুখানি সঙ্গ, কিছু চমৎকার স্মৃতি, কিছু মানুষের মনোযোগের কেন্দ্র হওয়া! এজন্যই তো বাঁচে। আমি কি আসলে খুব বেশি চেয়ে বসছি জীবন থেকে?
কিছুদিন পর রিমির জীবনে ঘটে গেল অবিশ্বাস একটি দূর্ঘটনা। যে দূর্ঘটনা ঘটার ১% চান্স নেই অথচ সেটাই ঘটলো তার জীবনে। মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়লো রিমি। তখন রকিও তার পাশে নেই। খুব কষ্টে দিন যেতে লাগলো। এই মুহূর্তে যাকে সবচেয়ে বেশি কাছে পাওয়ার কথা সেই মানুষটাই তার থেকে হাজার মাইল দূরে। একদিকে রকির অবহেলা অন্যদিকে একটি অবিশ্বাস্য দূর্ঘটনা সব মিলিয়ে অস্থির এক সময়ে সে দিন পার করছে।
বেশ কয়েকদিন পর রিমি রকিকে নক করলো। কিন্তু তাতে রকি তেমন রেসপন্স দেখালো না। সে রিতীমত রিমিকে এড়িয়ে চলা শুরু করলো। রিমির মেসেজের রিপ্লাই করে না, কোনো কথা বলে না৷ রিমির প্রতি রকির অবহেলা দিন দিন বেড়েই চলছে। রিমি একের পর এক সরি বলছে তবুও সে তাকে এড়িয়ে চলছে৷ প্রত্যেকটা সম্পর্ক এমনি৷ একজন বুঝলে অন্যজন বুঝে না৷ আর যখন দুজন বুঝে তখন আর পরিবার বুঝে না সমাজ বুঝে না।
একপর্যায়ে এসে তাদের এত ভালো রিলেশনশিপ টা ব্রেকআপ হয়ে যায়। ব্রেকআপের কোনো কারণ তারা জানে না। হঠাৎ করেই দূরত্বটা বাড়তে বাড়তে এখন অনেকটা দূরে চলে আসছে। দুজন চাইলে হয়তো আবার সব ঠিক করা যেত। রিমি চাইলেও রকি চাইছে না রিলেশনটা আবার কন্টিনিউস করতে। তাই ব্রেকআপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
রকির শেষ কথা ছিলো ‘ তুমি হয়তো ব্রেকআপের দুই তিনমাস পর আবার নতুন কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করবে আর এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২/৩ বছর পরও আমি সেইম আগের মতো থাকবো। তুমি ফিরে এসে আমাকে ঠিক আগের মতোই পাবে। এখন তুমি ভালো করে পড়াশোনা করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করো। সময় আসলে একদিন না একদিন ঠিক দেখা হবে।’
রকির শেষ কথাগুলো শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি। সে কিভাবে ভাবলো তাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে নিয়ে কোনোদিন ভাবতে পারবো স্বপ্ন দেখতে পারবে! আমার প্রতি কি তার এতটুকু বিশ্বাস নেই? সে এভাবে চলে গেলে কিভাবে থাকবো আমি। আমার যে খুব কষ্ট হবে সেটা কি সে বুঝে না?
ঠিক আছে আমিও প্রমাণ করবো আমার ভালোবাসা মিথ্যা ছিলো না। সে বলেছে ব্রেকআপের দুই তিনমাস পর আমি নতুন কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো, আমিও দেখিয়ে দিবো শুধু দুই তিনমাস কেন দুই তিন বছর পরও আমি আমার জীবনে নতুন করে কাউকে আসতে দিবো না। আমিও একদিন তার কথাটা মিথ্যা প্রমাণ করে দিবো৷ আজ থেকে শুধু সময়ের অপেক্ষা।
এর পর থেকে শুরু হলো নতুন এক পথ চলা। আমি জানি আমি কোনো ভুল মানুষকে ভালোবাসি নি। একদিন না একদিন সে ঠিকই আমার কাছে ফিরে আসবে। আমি তাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করি। আমি জানি যথাসময়ে আমি আমার বিশ্বাসের মর্যাদা পাবো।আমি নাহয় তার ফেরার অপেক্ষায় রইলাম।
ব্রেকআপের পরও অবুজ মনকে বুঝাতে পারছি না। বার বার তার কথা মনে করিয়ে আমাকে নিয়ে যায় কান্নার সাগরে ভাসিয়ে। রাত জাগার অভ্যাস ছিলো না কিন্তু সে আমাকে রাত জাগার অভ্যাস করিয়ে দিলো অথচ সেই নিঃসঙ্গ রাতের একমাত্র সঙ্গী হয়ে উঠলো আমার চোখের নোনা জল। আবেগের বশে মাঝে মাঝে তাকে অনলাইনে দেখলে নক করতাম। এতে সে প্রচন্ড বিরক্তি অনুভব করত তারপর হঠাৎ একদিন আমাকে ব্লক লিস্টে পাঠিয়ে দিলো। আমাকে আমার যথাযথ সম্মান দিয়ে দিলো। তবুও তার প্রতি আমার এতটুকু বিশ্বাস কমেনি। আমার বিশ্বাস একদিন না একদিন সে আমার কাছে ফিরে আসবেই আর আমার জায়গাটা অন্য কাউকে দিতে পারবে না।
অতঃপর এভাবে তার অপেক্ষায় কাটিয়ে দিলাম দুটি বছর। আমার রিলেশনের কথা কলেজে ওঠার পর আমার দুই বান্ধবীর কাছে শেয়ার করেছিলাম। তারপর সুযোগ পেলেই তারা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। আমি নাকি পাগল। যাকে কোনোদিন দেখিনি তারজন্য এভাবে অপেক্ষা করাটানাকি বোকামি। মাঝে মাঝে নিজেকে বোকা মনে হয়। আসলে সেও কি আমার মতো আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে নাকি নতুন কাউকে নিয়ে তার পৃথিবীটা সাজিয়ে নিয়েছে। অনেক কিছুই ভাবতে থাকি। কিন্তু বেলা শেষে তার প্রতি আমার বিশ্বাসটা অটুট রয়ে যায়। কেন জানি অপেক্ষা করতে আমার ভালোই লাগে। জীবনটা চলুক না জীবনের নিয়মে সমস্যা কি!
কিছুদিন পর আমার এক বান্ধবীর সহযোগিতা এক অলৌকিক ভাবেই জানতে পারলাম যার জন্য আমি এখনও অপেক্ষা করে আছি সেই মানুষটাই অন্য একজনকে নিয়ে তার পৃথিবীটা সাজিয়ে নিয়েছে। খবরটি শুনার পরে আমি কলেজে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। তারপর বান্ধবীরা আমাকে সামলে নিলো। উন্মাদের মতো সেদিন বাড়ি ফিরছিলাম। সামান্যর জন্য অনেক বড় একটি এক্সিডেন্টের হাত থেকে রক্ষা পেলাম সেদিন। বাড়িতে এসে দরজা বন্ধ করে ইচ্ছে মতো কান্না করলাম। আমার জীবনের শেষ কান্নাটা করে নিলাম। হয়তো আর কোনো দিন কান্না করার সুযোগ পাবো না। মানুষের হাসতে যেমন কারণ লাগে তেমনি কান্না করার জন্যও চাই একটি কারণ। কান্নার জলে ভাসিয়ে দিতে চাই আমার জীবনের সমস্ত কষ্ট, না পাওয়ার যন্ত্রণা। অবশেষে চোখমুখ মুছে হাসিমুখে হাজির হতে হলো বাবা মার সামনে। আমার ভেতরে ভূমিকম্প হচ্ছে অথচ কেউই কিচ্ছু টের পাচ্ছে না।
সেদিনের পর থেকে নিজেকে আস্তে আস্তে বাস্তবতার জগতে ফিরিয়ে আনলাম। বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না কিন্তু দিনশেষে কিছু মানুষের মুখে হাসি দেখার জন্য আমাদের মতো মেয়েদের বেঁচে থাকতে হয়। তবে এখন আর তার অপেক্ষা করি না, তাকে পাওয়ার আশা করি না। সে যখন অন্য কাউকে নিয়ে সুখি আছে সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে আমি থাকতে চাই না। হয়তো আমার ভালোবাসার মধ্যে কোনো কমতি ছিল তাই হয়তো তাকে আমি আটকে রাখতে পারলাম না। সে যদি অন্য কাউকে নিয়ে সুখি থাকে তাহলে তাঁর সুখেই আমি সুখি। নিরবে তার অজান্তেই চলে এলাম তার জীবন থেকে বীনা অভিযোগে । আর আমার ভালোবাসা থেকে তাকে মুক্ত করে দিলাম। সে সবসময় ভালো থাকুক এটাই চেয়েছিলাম সবসময় আর এখনও এটাই চাই।
এতদিন পর খুব করে জানতে ইচ্ছে হয়েছিলো কেন আমাদের গল্পটা এমন হলো? অন্য রকম ও তো হতে পারতো। কেন সেদিনের কথা সে ভুলে গেল? আমার জন্য কি একটু অপেক্ষা করা যেত না! কেন সে এমন করলো? তাই ফেইক আইডি দিয়ে তাকে নক করেছিলাম কিন্তু যেই আমার পরিচয় জানতে পারলো এমনি আমাকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দিলো। এখন এটাই আমার ঠিকানা। আমার ভালোবাসার প্রতিদান আমি পেয়ে গেছি। আসলে কিছু কিছু ভালোবাসার মিলন হয় না। সেই ভালোবাসা পূর্ণতা খুঁজে পায় না। সেই ভালোবাসাগুলো হেরে যায় বাস্তবতার কাছে। যাকে অন্ধের মতো একদিন বিশ্বাস করেছিলাম সেই আজ আমাকে অন্ধ প্রমাণ করে দিয়ে চলে গেলো। জীবনের কাছে এখন আমার একটাই চাওয়া সেই মানুষটাকে শুধু একনজর চোখের দেখা দেখবো। মন ভরে তাকে দেখবো। জানি না আমার এই স্বপ্নটা কোনোদিন পূরণ হবে কি না৷ তবে আমি আশায় থাকবো। নাই বা হলো অন্য সম্পর্কের মতো আমাদের সম্পর্কটা তাতে কি ভালোবাসা তো আর কম ছিল না। অল্প কিছুদিনের জন্য হলেও তো পেয়েছিলাম কিছু ভালোবাসা৷ জীবনের কাছে থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু কি পাবার আছে? সবশেষে শুধু এটাই চাইবো, সে সবসময় ভালো থাকুক সুখে থাকুক। আমি নাহয় আমার নগরীতে নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়ে দিবো তার ভালোবাসার স্মৃতি নিয়ে।
লেখকঃ মাহদিয়া আঞ্জুম মাহি, শিক্ষার্থী, সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে।