মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
জাকির হোসেন রাজু :: নার্সারি ব্যবসার মাধ্যমে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন জাহানারা বেগম। তিনি জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের চালবন গ্রামের বাসিন্দা। একসময়ে অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করলেও এখন নার্সারি ব্যবসা করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। পাশাপাশি সচ্ছলতা এনেছেন নিজের পরিবারেও।
নার্সারির পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে তাঁর ‘সিরি, দুপপুড়া গন্ধ ও বিজয় লক্ষী নামের তিনটি উপন্যাস, এবং কাজল ধোয়া জল ও রণ জয়ীরমনী নামের দুটি গীতিকাব্য প্রকাশিত হয়েছে।
জাহানারা বেগম জানান, ২০০৭ সালে ৪হাজার টাকা নিয়ে মাত্র চার শতক জায়গায় শুরু করেছিলেন নার্সারি ব্যবসা। এখন সেই নার্সারির বিস্তার করেছে একশত ২০ শতক জায়গা জুড়ে। এখানে নিয়মিত কাজ করেন ৪জন শ্রমিক। পাশাপাশি তিনি ও তার স্বামীও কাজ করেন। তার নার্সারিতে বিভিন্ন ধরনের ফুল, ফল, ওষধি ও কাঠের গাছের চারা পাওয়া যায়। এসব চারা বিক্রি করে বছরে প্রায় ৩লাখ টাকা লাভ হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ের পর সংসারে অভাব দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। স্বামী নিজের অল্প পরিমাণ জমিতে ধান চাষ করতেন। জমি থেকে যে পরিমাণ ধান পাওয়া যেত তা দিয়ে সারা বছর চলত না। সংসারে সচ্ছলতা আনতে নিজে কিছু একটা করতে চাইছিলাম। তাই প্রথমে বাড়ির আঙিনাতেই নার্সারি শুরু করি। প্রথম দিকে একাই নার্সারিতে কাজ করতাম। স্বামী তখন আমাকে সাহায্য করতেন না। তিনি ভাবতেন এসব করে ভাগ্যের পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না কখনোই। সফলতার পর স্বামীও আমার কাজে এগিয়ে এসেছেন। তিনি অনেক খুশি আমার এমন সফলতা দেখে।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাহানারা বেগম ২০১০ সালে ‘সফল নারী উদ্যোক্তা’ এবং ২০১৪ সালে ‘জয়িতা’ পুরস্কার পেয়েছেন। এখন তিনি এলাকার নারীদের জীবন-মান উন্নয়নে কাজ করছেন। এ লক্ষ্যে গড়ে তুলেছেন ‘এসো কাজ করি’ নামের একটি সংগঠন। ৩৫ সদস্যের এই সংগঠনটি মহিলা অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত। নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে সেলাইয়ের কাজ, বুটিকের প্রশিক্ষণ ও নার্সারি তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই সংগঠন থেকে। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন রোধেও সক্রিয় রয়েছেন জাহানারা বেগম।
জাহানারা বেগম দৈনিক সুনামকন্ঠ কে বলেন, আমার সংসারে আল্লাহর রহমতে কোন রকম অভাব নেই। একটা সময় খুব কষ্টে গেছে দিন। সন্তানদের পড়াশোনা করানোর জন্য খুব কষ্ট করতে হয়েছে। ৪ হাজার টাকা পুঁিজ থেকে এখন আমি প্রায় ৬০ লাখ টাকার মালিক হয়েছি। আমি আামার আশ পাশের নারীদেরও নার্সারি করতে উৎসাহিত করি।
এ ব্যাপারে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নয়ন মিয়া বলেন, জাহানারা বেগমের নার্সারিতে উৎপাদিত চারার বেশ সুনাম রয়েছে। একজন সফল নারী হিসেবে তিনি জেলায় পরিচিত। এ ধরনের উদ্যোক্তারা যেন ব্যবসায়ী হিসেবে টিকে থাকতে পারেন এবং দেশের বনায়নে ভূমিকা রাখতে পারেন সে জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।