মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন
আমি কেন হাসি? ছোটবেলায় আমি খুব শুকনো-পটকা ছিলাম। সবগুলো হাড় বেরিয়ে থাকত। মাথাটা ছিল বেঢপ বড়। আমার দাঁতগুলো ছিল বড়, আমি দাঁত ঢাকতে পারতাম না। ভাইবোনেরা আমাকে খেপাত ‘দাঁতুয়া’ বলে। আম্মা কষ্ট পেয়ে আমার হাতে লিখে রাখলেন, ‘দাঁত বন্ধ করে রাখব’। দাঁত বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করতে আমি ভুলে যেতাম।
বুয়েটে আমি একবার নির্বাচন করেছিলাম। ইউকসু নির্বাচন। শুনতে পেলাম, ভোটাররা বলাবলি করছেন, এই ছেলেটাকে ভোট দিতে হবে। ও সারাক্ষণ হাসে। আমি বুঝতে পারলাম, যা ছিল আমার শারীরিক ত্রুটি, তাকেই আমার গুণ বানানো যাবে। আমি হাসিমুখে ভোট চাইতে লাগলাম। ছোট্ট একটা প্যানেল থেকে ইলেকশন করে ওই প্যানেলের একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী হয়ে গেলাম আমি। এরপর থেকে আমি হাসিমুখে থাকি। পরে দেখি, হাসলে আসলেই রোগশোক সারে। একবার আমার খুব মাথাব্যথা। একটা আড্ডায় গিয়ে আমরা হাসাহাসি করছি। হঠাৎ খেয়াল হলো, আমার মাথাব্যথা সেরে গেছে।
আমাকে কবি সাজ্জাদ শরিফ একটা জিনিস শিখিয়েছেন। ঈর্ষা করব না। আমি আগে আমার সম বয়সী বা সমতুল্য কারো সাফল্যে ঈর্ষায় জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যেতাম। এতে বন্ধুর সাফল্য কমত না। আমার মন পুড়ে যেত। জিভ বিস্বাদে ভরে থাকত। আমি এরপর থেকে ঈর্ষার ঊর্ধ্বে উঠতে চেষ্টা করি। আমার কাছের বা দূরের বন্ধুর সাফল্যে সবার আগে আমি ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর আনন্দকে নিজের করে তোলার চেষ্টা করি। এমন কি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, অনূর্ধ্ব ১৪ ফুটবল দল সফল হলেও আমি সবার আগে তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। রিফ্লেক্টেড গ্লোরি। অন্যের গৌরবকে নিজের গৌরব করে তোলা। আমি দেখলাম, এতে আমার আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যায়। চারদিকে কত যে আনন্দের উৎস। আমার মন আর সারাক্ষণ বিষিয়ে থাকে না। যিনি ভালো লেখেন, তার লেখা উপভোগ করি, শিখি, খুশি হই, তাঁর সাফল্যকে নিজের সাফল্য ভাবি। যিনি জনপ্রিয়, তার পাশে দাঁড়াই, আবারো রিফ্লেক্টেড গ্লোরি পাই, আমার ভালো লাগে। ঈর্ষা করে কী লাভ? আর নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ? কক্ষনো না। আমাকে কেউ ভালোবাসেন, কেউ ঘৃণা করেন, কেউ আমার ক্ষতি করতে চান। তাতে কী হয়েছে। আকবর আলি খান আস্ত একটা বই লিখেছেন, ‘দুর্ভাবনা ও ভাবনা, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে।’ রবীন্দ্রনাথকে বাঙালি পন্ডিত, লেখক, হিন্দু মুসলমানেরা কীভাবে প্রচণ্ড গালিগালাজ করত, তা নিয়ে। ‘মনে রে আজ কহ যে, ভালোমন্দ যাহাই আসুক, সত্যরে লও সহজে। কেউবা তোমায় ভালোবাসে কেউবা বাসতে পারে না যে’… আমার বিরুদ্ধে যারা লেগে আছেন, তাদের মধ্যে যারা ভালো লেখেন, তাদেরকে আমি শ্রদ্ধা করি। আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমাকে নিয়ে নিন্দামন্দ –আমি সেসব পড়িও না। আর বলা আছে, আড়ালে কে আমার নামে কী বলছে, এটা আমাকে বলার দরকার নেই। কারণ আড়ালে আমরা সবাই একটু নিন্দামন্দ করে থাকি বটে। সামনের কথাটাই আসল কথা।
আমি কিন্তু এটা মন থেকেই বলছি: ‘যে আমাকে ভালোবাসে আমি তাকে ভালোবাসি। যে আমাকে ভালবাসতে পারে না, আমি তাকেও ভালোবাসি।
আমি যাকে ভালোবাসি তাকে আমি ভালোবাসি। যাকে ভালোবাসতে পারিনা আমি তাকেও ভালোবাসি!’
আমার এই পলিসি সেরা পলিসি, তা হয়তো নয়। আমি চেষ্টা করি অন্যের উপকার করতে, কারো ক্ষতি না করতে। আর একটা কথা অমিত হাবিব ভাই শিখিয়েছিলেন, দেবার বেলায় এগিয়ে থাকবেন। যদি দেখেন, আপনি বেশি দিয়ে কম পেয়েছেন, তাহলে ভাববেন আপনি জিতে গেছেন। এটা আমি কেনাকাটার সময়ও মেনে চলার চেষ্টা করি, মাঝে-মধ্যে…
সবার জীবন সুন্দর হোক। আসুন সবাই মিলে ভালো থাকি।
লেখকের ফেসবুক টাইম লাইন থেকে নেওয়া