মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
সুুপ্রিয় পাঠক, আজ আপনাদের মাঝে এমন একজন লেখক বন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দেবো যিনি হাওর পারের মানুষের জীবন জীবিকা নিয়ে লেখা-লেখির সাথে জড়িত রয়েছেন ওতপ্রোতভাবে। ইতোমধ্যেই হাওর পাড়ের মানুষের সুখ-দুঃখ, জীবন-জীবিকা নিয়ে লেখা তাঁর দুটি সাড়াজাগানো কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। ২১ শে বই মেলা ২০২০ এ তার আরও দুটি বই প্রকাশিত হবে। তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের সাথেও জড়িত রয়েছেন। তিনি হলেন কবি ও সাহিত্যিক অজয় রায়।
মাসিক পত্রমিতালি’র জন্য তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুনামগঞ্জের জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম ‘আমাদের সুনামগঞ্জ ডটকম’ সম্পাদক ও প্রকাশক, মাসিক ‘পত্রমিতালির’ প্রধান সম্পাদক ও বিশ্বম্ভরপুর অনলাইন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্টাতা সভাপতি জাকির হোসেন রাজু এবং মাসিক ‘পত্রমিতালি’র সম্পাদক ও প্রকাশক হাসিনা হাসি। সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য সময় দেওয়ায় কবিকে মাসিক ‘পত্রমিতালি’র পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
হাসিঃ কেমন আছেন?
অজয় রায়ঃ হ্যাঁ, ভালো আছি।
রাজুঃ আপনার লেখা লেখির শুরুটা হয় কিভাবে?
অজয় রায়ঃ ১৯৯৫ সাল থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষয় দিয়ে মুলত লিখাটা শুরু হয়। ২০০১ সালে সিলেটে ‘কৈশোর বার্তা’ নামক পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সময় ছোটদের জন্য একটি পাতায় নিয়মিত লিখা হতো, সেখানে লিখতাম,এমনকি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনও লিখতাম, তাছাড়া টেমস সুরমাসহ তখন সিলেটের স্থানীয় দৈনিকেও লেখা হতো। আর এভাবেই শুরু হয়ে যায় লেখালেখিটা। পেশায় নিয়োজিত হয়েও দেয়ালিকা, ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন সাহিত্যসাময়িকী নিয়ে কাজ করি।
হাসিঃ আমরা লক্ষ করেছি আপনার লেখায় হাওরাঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে এর কারণ বলুন?
অজয় রায়ঃ দীর্ঘদিন শহরে থাকার পর যখন পেশার টানে গ্রামে আসি, তখন দেখতে পাই নিকট পরিবেশে সহজ সরল মানুষগুলোর সীমাহীন দুঃখ দুর্দশা। তাছাড়া, কঠোর পরিশ্রম করেও যেন কেউ সুখ খোঁজে পাচ্ছে না, এ বিষয়টা আমাকে ভাবিয়ে তুলে। বন্যা,পাহাড়ি ঢল,খরা, ঝড়,ধানে চিটা,এমনকি হাওরের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি, জীবনধারা, বিভিন্ন কৃষ্টি সকলের কাছে তুলে ধরাটাও জরুরি মনে হয়েছিলো। তখন সারাদেশের মানুষের কাছে হাওর অঞ্চলের চিত্রটা জানানোর প্রয়োজনবোধ করি। আর এ থেকেই হাওরাঞ্চলের শ’তিনেকেরও বেশি কিছু কবিতা লিখতে পেরেছি। এখনো সুখ দুঃখের কবিতা গল্প অব্যাহতভাবে লিখে যাচ্ছি।
রাজুঃ আপনার শিক্ষা জীবন নিয়ে বলুন?
অজয় রায়ঃ আমাদের পরিবারে বেশ কয়েকজন সদস্য শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। আমার বাবা ছিলেন ডিডরাইটার। তখন
আমাদের গ্রামে প্রাাইমারি ও হাইস্কুল দুটোই ছিলো। একজন আপন আত্মীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন তিনি তখন আমাদের বাড়িতেই লজিং থাকতেন। উনার কাছেই শিক্ষা জীবনের সূচনা। নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে সিলেটে অনার্স,মাস্টার্স পড়াশুনা শেষ করি।
হাসিঃ আপনার কর্ম জীবন নিয়ে বলুন?
অজয় রায়ঃ লেখাপড়া শেষ করে সিলেটে একটি বিদেশী সংস্থায় কাজ পাই। তখন ওখানে একটি প্রকল্প ছিলো, প্রকল্পে গবেষণামুলক কাজও ছিলো। শাবিপ্রবির সমাজকর্ম ও নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঠ পর্যায়ের গবেষণার কাজে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। বেশ কিছুদিন কাজ করি। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সমাজের বেশ কয়েকজন জ্ঞানীগুণী লোকের সান্নিধ্য লাভ করি। আমাদের পরিবারটি ছিলো বড় পরিবার,বলা যায় যৌথ পরিবার। আমি ছিলাম পরিবারের বড় ছেলে। তাই নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই পরিবারের হাল ধরে এগিয়ে চলা। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে জানুয়ারিতে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করি। আজো এ পেশায় কর্মরত আছি।
৬ রাজুঃ আপনি একজন শিক্ষক হিসেবে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে কেমন দেখতে চান?
অজয় রায়ঃ অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া প্রিয় এই দেশ। আমাদের এই দেশ হবে একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ। বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এখানে না খেয়ে কেউ মারা যাবে না। মানুষে মানুষে হানাহানি হবে না। যেখানে থাকবে না সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বাতাস। পারস্পরিক স¤প্রীতির বন্ধন অটুট রবে। এমন একটি দেশকে হৃদয়ে লালন করি। লাখো শহীদের তাজা রক্তে অর্জিত এদেশের মানুষ উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক হিসেবে গর্ববোধ করবে।
রাজুঃ আমরা জানি আপনি বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন এ সম্পর্কে বলুন।
অজয় রায়ঃ হাওর অঞ্চল সাহিত্যের এক অনন্য জায়গা। বলা যায় হাওর সাহিত্যর উপাদানে ভরপুর। এখানে হাছন রাজা, রাধা রমন, দূর্বিন শাহ,বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিম, অধ্যাপক শাহেদ আলীসহ অনেক সাহিতপ্রেমীর জন্ম হয়েছে। সাহিত্য সংগঠনে জড়িত বলতে সুনামগঞ্জ জেলা সাহিত্য পরিষদের যুগ্ম আহব্বায়ক, গাঙচিল সাহিত্য পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সহ- সভাপতি, মধ্যনগর সাহিত্য পরিষদে সভাপতিসহ স্থানীয় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেরও সহ -সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছি।
হাসিঃ আমরা লক্ষ করছি বর্তমানে কবিতার পাঠক সংখ্যা খুবই কম,পাঠক কে কবিতার বই পড়ানোর জন্য কি করা প্রয়োজন বলে আপনি করেন?
অজয় রায়ঃ বর্তমানে সাহিত্য সাধনায় সৃজনশীলতার চরম ঘাটতি হচ্ছে। বিভিন্ন কারনে পারিবারিক, সামাজিক বন্ধনগুলো ভেঙে যাচ্ছে। যার প্রভাব চারপাশে লক্ষ্য করা যায়। এ জন্যে যত বেশী বই পড়া যায়, তত বেশী অন্ধকার দূরীভূত হবে। বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। সেটা হোক ঘরে, সেমিনারে বা লাইব্রেরিতে। একজন মানুষ দিনে অন্তত একবার হলেও বই পড়লে সে সুন্দর জীবনের স্বাদ উপভোগ করতে পারবে। চারপাশের অন্ধকার তাকে কখনোই গ্রাস করতে পারবে না। এমনকি সহচর, বন্ধু, বান্ধব ও পরিবারের সদস্যরাও এর প্রভাব অনুধাবন করতে পারবে। কাজেই বই হতে হবে বিষয় নির্ভর, জীবনগঠিত রচনায় প্রাধান্য দিতে হবে, হতে পারে কবিতা বা গল্প,শিশুদের জন্যেও উপযোগী বই রচনা করতে হবে। পাঠকও যাতে তার পছন্দের বইটি পেতে পারে সেদিকেও লেখকদের খেয়াল রাখতে হবে, শ্রেণিমত সৃষ্টি করতে হবে পাঠক। এ জন্যে নিজেদের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। বই পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হলে এ ধারা নিশ্চিতভাবে অব্যাহত থাকবে।
৯ রাজুঃ আপনি তো হাওরঞ্চলের লোক, হাওরের উন্নয়নে আপনার মতামত কি?
অজয় রায়ঃ হাওর শব্দটি শুধু “পানি আর ভাটি” এ দু’য়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। হাওর হলো লাখো মানুষের আহার যোগানের অন্যতম ক্ষেত্র। এ ক্ষেত্রকে আরো টেকসই,শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করতে হবে। শহরে বসবাসরত প্রতিটি মানুষেরও তিনবেলা আহার যোগায় আমাদের প্রাণের এ হাওরগুলো। বলা যায় হাওর প্রাণের বন্ধন। কাজেই, প্রতিটি হাওরকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের চিন্তার পরিধি আরও জোরদার করতে হবে। কৃষকের ধানের মূল্য কৃষকের হাতে সরাসরি পৌছে দিতে হবে। হাওরের জীববৈচিত্র, প্রাকৃতিক সম্পদ, হাওররক্ষা বাঁধ ও পরিবেশ রক্ষাসহ হাওরবাসীর জীবনের মানোন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। হাওর নিয়ে সাহিত্যভাবনা জাগিয়ে তুলতে হবে। হাওরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে দেশবাসীর কাছে।
১০ হাসিঃ মাসিক পত্রমিতালি সম্পর্কে কিছু বলুন?
অজয় রায়ঃ সাহিত্য মানুষের মনকে প্রসারিত করে। একটি কবিতা বা গল্প বা সাহিত্যের কোন খবর পড়ে একজন পাঠককে যেমন উজ্জীবিত করে তেমনি মনোজগতে জ্ঞান সমৃদ্ধির ঝড় তোলে। এ ক্ষেত্রে সাহিত্য পথে পত্রমিতালি আমি বলবো সুনামগঞ্জের সাহিত্যের নতুন দিগন্তেরর সূচনা। শুধু তাই নয়, সাহিত্যপ্রেমী নবীন – প্রবীণ লেখকদের লেখালেখির একটা জায়গাও তৈরি হলো। কাজেই সাহিত্যের কোন কাগজ প্রকাশিত হওয়া এ ক্ষেত্রে অনন্য মাইলফলক। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো দিক বলা যায়।
রাজুঃ পত্রমিতালি’তে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
অজয় রায়ঃ আপনাদের উভয়কেই ধন্যবাদ।