মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন

জীবনের শেষ অবধি হাওর ও হাওরের সাহিত্যের জন্য কাজ করে যেতে চাই -হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকার

জীবনের শেষ অবধি হাওর ও হাওরের সাহিত্যের জন্য কাজ করে যেতে চাই -হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকার

সুুপ্রিয় পাঠক, আজ আপনাদের মাঝে এমন একজন লেখক বন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দেবো যিনি বিগত এক-দশক ধরে হাওর পারের মানুষের জীবন জীবিকা নিয়ে লেখা-লেখির সাথে জড়িত রয়েছেন ওতপ্রোতভাবে। ইতোমধ্যেই হাওর পাড়ের মানুষের সুখ-দুঃখ, জীবন- জীবিকা নিয়ে লেখা তাঁর তিনটি সাড়াজাগানো কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। অপ্রকাশিত রয়েছে কবিতা,গল্প,উপন্যাস,প্রবন্ধ,নাটক সহ আরো প্রয় ১৬ টি বই।

প্রিন্টং এবং অনলাইন মিডিয়ায় যার নিয়মিত পদচারণা। হাওরের সাত জেলায় তৃণমূলে সাহিত্য চর্চা প্রসারের জন্য যিনি কাজ করে যাচ্ছেন রাত-বিরাত, গড়ে তুলেছেন হাওরসাহিত্য ভিত্তিক দেশের প্রথম পাঠাগার “কেন্দ্রীয় হাওরসাহিত্য গণপাঠাগার, বংশীকুন্ডা” ও সময়ের অন্যতম একটিভ সাহিত্য সংগঠন “হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা (হাসুস) বাংলাদেশ। নিজের বাসায় হাওর কর্ণার করে নিয়মিত তরুণ লেখকদের কবিতা পাঠের সুযোগ দিয়ে উৎসাহিত করছেন হাওরের তরুণ প্রজন্মকে। তিনি হলেন আমাদের সবার পরিচিত হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকার। ইতিমধ্যে তাঁর তিনটি একক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের সাথেও জড়িত রয়েছেন। এছাড়াও তাঁর পরিচালিত ইউটিউব চ্যানেল ‘স্বপ্নীল হাওর’ এর মাধ্যমে কবিতা প্রচার করে তরুণ লেখকরা হচ্ছেন উদ্বীপ্ত। প্রতি সপ্তাহে তাঁঁর প্রতিষ্ঠিত হাসুস ফেসবুক গ্রুপে আয়োজিত হচ্ছে কবিতা প্রতিযোগিতা।

উল্যেখ্য তিনি লেখালেখির স্বীকৃতি স্বরুপ ইতোমধ্যে জালালাবাদ কবি ফোরাম কর্তৃক তরুণ লেখক পদক -২০১৬, প্রিয়জন সাহিত্য পরিষদ (প্রিসাপ) কর্তৃক প্রতিদিনের সেরা লেখক-২০১৯ ও ভারতীয় সংগঠন অমরত্ব সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক ‘সাপ্তাহিক সেরা কবি পদক-২০১৯’ অর্জন করেছেন। সুনামগঞ্জের প্রথম মাসিক সাহিত্য পত্রিকা পত্রমিতালি’র জন্য তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুনামগঞ্জের জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম ‘আমাদের সুনামগঞ্জ ডটকম’ সম্পাদক ও প্রকাশক, মাসিক ‘পত্রমিতালির’ প্রধান সম্পাদক ও বিশ্বম্ভরপুর অনলাইন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্টাতা সভাপতি জাকির হোসেন রাজু এবং মাসিক ‘পত্রমিতালি’র সম্পাদক ও প্রকাশক হাসিনা হাসি। সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য সময় দেওয়ায় কবিকে মাসিক ‘পত্রমিতালী’র পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। ‘আমাদের সুনামগঞ্জ’র পাঠদের জন্য সাক্ষাৎকারটি দেওয়া হলো।

হাসিঃ কেমন আছেন?
জীবন কৃষ্ণঃ পরম করণাময়ের কৃপায় ভালই আছি। আপনি কেমন আছেন?
হাসিঃ জ্বি ভাই, আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। শুনেছি আপনার তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থ তিনটি সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
জীবন কৃষ্ণঃ সত্যিই শুনেছেন, ইতিমধ্যে আমার তিনটি একক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলা ২০১৬ সালে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মাটির পুতুল’, ২০১৭ সালে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘হাওরবিলাপ’ ও ২০১৮ সালে তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘হাওর মোদের জীবন মরণ’ প্রকাশিত হয়।

রাজুঃ আপনার লেখা লেখির শুরুটা হয় কিভাবে ?
জীবন কৃষ্ণঃ আমার লেখালেখিটা শুরু হয় মূলত হাইস্কুল জীবন থেকেই। সেটা অনেকটা মনের অজান্তেই কবিতার প্রতি ভালোবাসা থেকে। তবে দুঃখ জনক হলো সেই সময়ের লেখাগুলো হারিয়ে ফেলেছি।

হাসিঃ আমরা লক্ষ করেছি আপনার লেখায় হাওরাঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে এ বিষয়ে কিছু বলুন?
জীবন কৃষ্ণঃ আপনি জানেন আমার জন্ম হাওরাঞ্চলে। তাছাড়া আমি ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি হাওরাঞ্চলের মানুষের সংগ্রামী জীবন ,হাওরাঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা। তাই আমি চাই হাওরাঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখ গুলো আমার লেখনির মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে ফুটিয়ে তুলতে।
রাজুঃ আপনার শিক্ষা জীবন নিয়ে কিছু বলুন?
জীবন কৃষ্ণঃ আমার প্রাথমিক শিক্ষা আমার জন্মস্থান বাট্টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই। এস.এস.সি পাশ করেছি ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা মমিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৩ সালে। এইচ.এসসি পাশ করেছি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ২০০৫ সালে এবং গণিত বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স করেছি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট থেকে ২০১২ সালে।

হাসিঃ আপনার কর্ম জীবন নিয়ে বলুন?
জীবন কৃষ্ণঃ ছোটবেলায় থেকেই আমি পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে সম্মান করতাম। তাই কর্ম জীবনেও শিক্ষতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছি।

রাজুঃ আপনি একজন শিক্ষক হিসেবে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে কেমন দেখতে চান?
জীবন কৃষ্ণঃ একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আমার এই জন্মভূমিকে একটি সু-শিক্ষিত, বেকার মুক্ত, হতাশামুক্ত এবং সৃজনশীল উন্নত দেশ হিসেবে দেখতে চাই।

হাসিঃ আমরা জানতে পারলাম ২৯ জুন ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য সংগঠন ‘গাঙচিল ’ প্রতিষ্ঠাতা প্রধান খান আখতার হোসেন আপনাকে হাওরকবি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে এব্যাপারে কিছু বলুন?
জীবন কৃষ্ণঃ দেখুন সম্বোধন করার ব্যাপারটা একান্তই পাঠকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। পাঠকের জন্যই লিখি, পাঠকের তৃপ্তির জন্যই লিখি। অতএব পাঠক মনতৃপ্তিতে আমাকে যেভাবেই সম্বোধন করুক না কেন তাতে আমার দ্বিমত নেই। প্রত্যেক ব্যাক্তির কর্মই তাঁর ফসল। খান দাদু আমার সুদীর্ঘ দিন ধরে হাওর নিয়ে লেখালেখির স্বীকৃতি স্বরুপ আমাকে ‘হাওরকবি’ উপাধি দিয়েছেন এই উপাধি আমি সাদরে গ্রহণ করলাম। এছাড়াও দৈনিক সুনামগঞ্জের সময়, সুনামগঞ্জের জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা ‘আমাদের সুনামগঞ্জ ডটকম’ অনলাইন জাতীয় দৈনিক বঙ্গনিউজ ডটকম সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় আমাকে হাওরকবি উল্যেখ করে নিউজ করেছে।

রাজুঃ শোনলাম আপনি বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
জীবন কৃষ্ণঃ আমি বংশীকুন্ডা ছাত্র কল্যান পরিষদ,সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক, এস.সি.এস ছাত্র কল্যান পরিষদ, বংশীকুন্ডার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি, মধ্যনগর স্টুডেন্ট এসোশিয়েশন, সাস্ট’র সাবেক সহসভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সহ সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ কবি সভা সিলেট জেলা শাখার সহসভাপতি, জালালাবাদ কবি ফোরাম, সিলেট সহসভাপতি, বংশীকুন্ডা সাহিত্য সংসদ’র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, বিশ্ব কবি লেখক ফোরাম,সিলেট বিভাগীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক, হাওর পাড়ের ধামাইল বাংলাদেশ,মধ্যনগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক,
গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক, অনলাইন পত্রিকা আমাদের সুনামগঞ্জ ডটকম’র সাহিত্য সম্পাদক, হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা (হাসুস) বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি।

হাসিঃ আমরা লক্ষ করছি বর্তমানে কবিতার পাঠক সংখ্যা খুবই কম, পাঠক কে কবিতার বই পড়ানোর জন্য কি করা প্রয়োজন বলে আপনি করেন?
জীবন কৃষ্ণঃ কবিতার পাঠক সংখ্যা কম নয়। তবে তারা অনেকটা নিস্ক্রীয়। তাদের আবিষ্কার করতে হবে। ব্যাপারটা হচ্ছে এরকম আপনার কবিতাটা যখন বাস্তব ধর্মী, হৃদয়ানুভব নির্ভর হচ্ছে না তখনই পাঠক রেস্পন্স করছেনা, নিস্ক্রিয় থাকছে। আমার মতে, কবিতাটি যখন উদ্ভট জটিল শব্দ নির্ভর,বেমানান গদ্যমালা দিয়ে তৈরি হচ্ছে তখনই পাঠক নিস্ক্রিয় থাকছে যদিও সে কবিতার পাঠক। অপর পক্ষে কবিতাটি যখন বাস্তব ধর্মী, সমকালীন প্রসঙ্গ নির্ভর ও সহজ বোধ্য ভাষায় সাহিত্যরস সমৃদ্ধ হচ্ছে তখন পাঠকবৃন্দ রেসপন্স করছে। তাই এক কথায় বলা যায় আমাদের মান সমপন্ন কবিতা লিখতে হবে। তাহলে কবিতার পাঠক আরো বিপুল পরিমানে বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি।

রাজুঃ হাওর নিয়ে আপনার সর্বশেষ ভাবনা কি?
জীবন কৃষ্ণঃ হাওর নিয়ে আমার সর্বশেষ ভাবনা হলো এই হাওরের মানুষ একদিন আর অসহায় থাকবেনা, অভাবে তাড়িত থাকবেনা। এটা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। তবে পাঠকদের কাছে দোয়া/আশীর্বাদ চাই আমি যেনো আমার জীবনের শেষ অবধি পর্যন্ত হাওর ও হাওরের সাহিত্য নিয়ে হাওরের জন মানুষের সুখ, দুঃখ নিয়ে লিখে যেতে পারি, কাজ করে যেতে পারি।

হাসিঃ সাহিত্য পত্রিকা “পত্রমিতালী” সম্পর্কে একটু বলুন?
জীবন কৃষ্ণঃ মাসিক ‘পত্রমিতালি’ সাহিত্য পত্রিকাটি সুনামগঞ্জে একটি ভিন্ন ধারার সাহিত্য পত্রিকা হবে বলে আমি মনে করি। পত্রিকাটির প্রথম প্রকাশনায় আমার মতো একজন সাদামাটা লেখকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এজন্য আমি পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক, সম্পাদক ও প্রকাশক সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমি পত্রিকাটির সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি।

রাজুঃ পত্রমিতালি সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
জীবন কৃষ্ণঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন




 

 

 

 

© 2017-2022 All Rights Reserved Amadersunamganj.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!