আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আপনারা ভাল আছেন। বর্তমানে দেশের শিক্ষিত বেকারদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি চাকরি। কারন একটি চাকরির সাথে জড়িয়ে আছে আপনার ভবিষ্যৎ। একটি চাকরি আপনার জীবনটাই পাল্টে দিবে। চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে যারা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করতে চান তারা কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন আজ তা নিয়ে বিস্তারিত লিখছি। গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সরকারি মাধ্যমিকের জন্য পিএসসি প্রথম বারের মতো বহুল প্রত্যাশিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ১২টি বিষয়ে মোট ১৩৭৮ জন নিয়োগ দেয়া হবে, যা পরবর্তীতে বাড়তে পারে। সাধারণত পিএসসি

ক্যাডার/নন-ক্যাডার (১ম শ্রেণি)/নন-ক্যাডার (২য় শ্রেণি) এ তিন ধরণের নিয়োগ প্রক্রিয়াতে তিন ধাপে পরীক্ষা নিয়ে থাকে। প্রিলি+লিখিত+মৌখিক পরীক্ষা। কিন্তু মাধ্যমিকের এ নিয়োগে কোনো ধরণের লিখিত পরীক্ষা নেই, যদিও বিষয় ভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হবে তবে সবার জন্য একই প্রশ্ন। বিষয়ভিত্তিক শূন্যপদের তালিকাঃ- মোট পদ ১৩৭৮ বাংলা – ৩৬৫ টি, ইংরেজী – ১০৬ টি, গণিত – ২০৫ টি, সামাজিক বিজ্ঞান – ৮৩ টি, ভৌত বিজ্ঞান – ১০ টি, জীব বিজ্ঞান – ১১৮ টি, ব্যবসায় শিক্ষা – ০৮ টি, ভূগোল – ৫৪ টি, চারুকলা – ৯২ টি, শারীরিক শিক্ষা – ৯৩ টি, ধর্ম – ১৭২ টি, কৃষি শিক্ষা – ৭২ টি পরীক্ষা পদ্ধতিঃ- MCQ ধরনের ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ও ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বন্টনঃ- বাংলা – ৫০, ইংরেজী – ৫০, সাধারন জ্ঞান ( বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী) – ৪০, গণিত ও মানসিক দক্ষতা – ৬০ আবেদনের সময়সীমাঃ- ১০/০৯/২০১৮ তারিখ দুপুর ১২ টা হতে ০৮/১০/২০১৮ তারিখ সন্ধা ৬ টা পর্যন্ত আবেদন ফিঃ- ৫০০ টাকা এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনাকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। মোট ২০০ টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ নম্বর কাটা যাবে। অর্থাৎ দুইটি উত্তর ভুল হলেই প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১ নম্বর কাটা যাবে। আপনাকে প্রতিটি বিষয়ের জন্যই আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আর প্রস্তুতি নিতে হবে ভালভাবে। কোন অবহেলা করা যাবেনা। কারন আপনাকে কয়েক লক্ষ প্রার্থীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তাই আপনার ও আপনার পরিবারের স্বপ্ন পূরনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করুন। কি কি পড়বেন ও কিভাবে পড়বেন- শুরুতে ২০১৫-২০১৮ সালে পিএসসির অধীনের যতগুলো পরীক্ষা হয়েছে সেই প্রশ্নগুলো খুব ভালভাবে পড়বেন। পিএসসির প্রশ্ন সম্পর্কে একটা ধারনা হবে আর পরীক্ষায় কিছু কমনও পাবেন। বাংলাঃ প্রথমেই আসি বাংলা নিয়ে। বাংলা

অংশে ব্যাকরণের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড প্রণীত ব্যাকরণ বইয়ের সব অধ্যায় উদাহরণসহ ভালোভাবে পড়তে হবে। ব্যাকরণ থেকে ভাষা, বর্ণ, শব্দ, সন্ধি বিচ্ছেদ, কারক, বিভক্তি, উপসর্গ, অনুসর্গ, ধাতু, সমাস, বানান শুদ্ধি, পারিভাষিক শব্দ, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ থেকে প্রশ্ন আসে। সাহিত্য অংশে জানতে হবে কবি সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম ও জীবনী সম্পর্কে। এসএসসি বোর্ড বইয়ের লেখক পরিচিত ও কবি পরিচিতি অংশটুকু পড়তে হবে। পিএসসি নির্ধারিত ১১ জন সাহিত্যিক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে হবে। সাহিত্যের যুগ, গল্প বা উপন্যাসের রচয়িতা, ছদ্দনাম , বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম, কবিতার লাইন উল্লেখকরে কবির নাম থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। মোটকথা বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আপনার খুব ভাল বেসিক থাকতে হবে। ইংরেজিঃ ইংরেজি গ্রামারের Right forms of verb, Tense, Number, Gender, Preposition, Parts of Speech, Voice, Narration, Spelling, Sentence Correction- থেকে প্রশ্ন আসে। যে কোন গ্রামার বই থেকে গ্রামারের এই টপিকস গুলো উদাহরণসহ পড়ুন। মুখস্থ করতে হবে Phrase and Idoims, Synonym, Antonym। ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদও পড়তে হবে। ইংরেজি সাহিত্য থেকে লেখকদের নাম, তাদের যুগ, তাদের বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম, কিছু লিটারেরি টার্মস, কে কে নোবেলজয়ী, কোন নাটক, উপন্যাস বা কবিতা কে লিখেছেন এবং এসব নাটক বা উপন্যাসের বিখ্যাত লাইন ও বিভিন্ন চরিত্র থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ইংরেজি সাহিত্য সম্পর্কে বেসিক ধারণ নিবেন।গণিত : এই অংশে মার্কস পাওয়া তুলনামূলক সহজ। প্রতিদিন মিনিমাম ৩ ঘণ্টা গণিত প্রাকটিস করা দরকার। পাটিগণিতের পরিমাপ ও একক, ঐকিক নিয়ম, অনুপাত, শতকরা, সুদকষা, লাভক্ষতি, ভগ্নাংশ থেকে প্রশ্ন আসে। বীজগণিতের সাধারণ সূত্রাবলী থেকে প্রশ্ন থাকে। মুখে মুখে ও সূত্র প্রয়োগ করে সংক্ষেপে ফল বের করার প্র্যাকটিস করতে হবে। যাতে প্রশ্ন দেখামাত্রই সূত্র প্রয়োগ করে ফল বের করা যায়। জ্যামিতির জন্য ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বর্গক্ষেত্র, রম্বস, বৃত্ত ইত্যাদির সাধারণ সূত্র ও সূত্রের প্রয়োগ প্রাকটিস করবেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যবই যেমন অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই অনুসরণ করলে ভালো হবে। এছাড়া বাজারে গনিতের অনেক বই পাওয়া যায়। একটি বই ভাল করে অনুশীলন করুন। মানসিক দক্ষতাঃ মানসিক দক্ষতা থেকে ভাষাগত যৌক্তিক বিচার, সমস্যা সমাধান, বানান ও ভাষা, যান্ত্রিক দক্ষতা, স্থানাঙ্ক সম্পর্ক, সংখ্যাগত ক্ষমতা এবং সম্পর্ক (রক্ত, সময়) ও দিক নির্নয় ক্ষমতা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। মানসিক দক্ষতার একটি বই নিয়ে বিগত বছরে বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় আশা প্রশ্ন গুলো ভালভাবে অনুশীলন করলে আশাকরি ভাল মার্কস পাবেন। সাধারণ জ্ঞানঃ বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে প্রশ্ন বেশি আসে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, বিখ্যাত স্থান, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ, জাতীয় দিবস, বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনী থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। আর আন্তর্জাতিক অংশে বৈশ্বিক ইতিহাস, ভূ রাজনীতি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, দেশ, মুদ্রা, রাজধানী, আন্তর্জাতিক দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, খেলাধুলা ও বিশ্বের চলমান ও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে প্রশ্ন থাকে। নবম দশম শ্রেণীর টেক্সট বইয়ের সাথে একটি রেফারেন্স বই বা গাইড বই থেকে এগুলো পড়তে পারেন। সাম্প্রতিক বিষয়ের জন্য মাসিক কারেন্ট এফিয়ার্স পড়তে পারেন। উপরের প্রস্তুতির জন্য বাজারে অনেক বই পাবেন। বিসিএস প্রিলির জন্য বিষয়ভিত্তিক বই কিনতে পারেন সাথে ভাল মানের একটা ডাইজেস্ট কিনবেন। মাসে ৩-৪ টা মডেল টেস্ট দিবেন। প্রতিদিনই পড়বেন। এভাবে পড়লে আশা করি আপনি প্রিলি কোয়ালিফাই করতে পারবেন। প্রিলিমিনারি তে ১৩০-১৪০ সেইফ জোন। তবে এটা নির্ভর করে প্রশ্নের মানের উপর আর পিএসসির সিদ্ধান্তের উপর। ভাইভায় পাস মার্ক ২০ এবং ৪০%। আর আপনি চাইলে আপনার নিজের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারেন। তবে যেভাবেই নেন না কেন আপনাকে অনেক পড়তে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। ৩০ বছর যে চাকরি করে আপনার জীবন চলবে সেই চাকরির জন্য অন্তত দৈনিক ১২-১৫ ঘণ্টা করে পড়ালেখা করুন। চাকরিজীবীরা সময় বের করে নিবেন। যারা নেগেটিভ কথা বলবে তাদের থেকে দূরে থাকুন। আপনি যদি ভালভাবে বুঝে পড়েন সেটা ঠিকই কাজে লাগবে। পড়ালেখা কখনো বৃথা যায়না। কোননা কোন ভাবে এর সুফল আপনি পাবেনই। ভাল প্রস্তুতি, ভাল পরীক্ষা, ভাল চাকরি। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো। ভাল থাকবেন।